খুব সম্প্রতি এক নাট্য উৎসবে বিধানসভার অধ্যক্ষ মাননীয় বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক নিয়ে কথা হচ্ছিল । ওনার সঙ্গে "নাট্য মঞ্চ" বিষয়ক কথা বলতে চাই জেনে বেশ আগ্রহের সঙ্গেই বিধানসভায় আসার অনুমতি দিলেন। কথা মতো পৌঁছে গেলাম বিধানসভায়। গেটের সিকিউরিটি পেরিয়ে ওনার ঘরের লাগোয়া সামনের ঘরে চায়ের চুমুকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা। মিনিট দশেক পরেই ওনার ঘর থেকে ডাক এলো।ফাইল হাতে কাজে ব্যস্ত মানুষটি যে কতটা নাটক মনন তা ওনার ব্যবহারেই প্রকাশ পেল। আমার ইতস্ততা কাটিয়ে দিলেন উনি নিজেই। প্রথমেই জানালেন, ওনার প্রথম নাটক দেখা শুরু কলেজ জীবনে। তবে ছোটবেলায় মা - কাকিমার সঙ্গে যাত্রা উৎসব দেখতে যেতেন। রবীন্দ্রসদনে বীনাপানি দেবীর 'নটী বিনোদিনী' দেখতে গিয়েছিলেন। তখন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
কিছুক্ষণ স্মৃতিমন্থন করে তিনি বলেন, “নাটকের প্রতি বরাবরই আমার একটা আগ্রহ রয়েছে। থিয়েটার দেখে যত আনন্দ পাওয়া যায়, চলচিত্র দেখে তত আনন্দ প্রাপ্তি হয় না। বিশেষ করে আজকাল যে ধরনের নাটক হচ্ছে সেগুলির যথেষ্ট উৎকর্ষতা আছে। চলচিত্রকে টেক্কা দেওয়ার মত নাটকও হচ্ছে। জোরালো বক্তব্য থাকে থিয়েটারে। যা মানুষের মেনে প্রভাব বিস্তার করে। স্বাধীনতার সময়ে থিয়েটারের একটা বিশাল ভূমিকা ছিল।” নাটক দেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় উনি শুরুতেই বলেন “আমি আমার পদকে ব্যবহার করতে চাই না। টিকিট কেটে, স্ত্রীর সঙ্গে নাটক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে হলে ঢুকে পড়ি। আমার সুবিধা রয়েছে, খুব একটা পরিচিত মুখ আমি নই। (মুচকি হেসে) সুতরাং আমার জন্য মানুষের আগ্রহ ততটা থাকে না। ব্যাপারটা খুব এনজয় করি। বিভাস চক্রবর্তীর নাটক খুব ভালো লাগে। ব্রাত্য বসুর নাটকও দেখি, এছাড়া কিছুদিন আগে সায়কের ‘পিঙ্কি বুলি’ দেখলাম।”ওনার দেখা প্রথম নাটক উৎপল দত্ত’র ‘টিনের তরোয়াল’। সেই সময় আরও একটি নাটক দেখেছিলেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। আরও অনেক নাটকই দেখেছেন, অনেক পুরোনো নাটক সেগুলি। তাই নামগুলি সঠিক মনে নেই।নাটক নিজে করার অভিজ্ঞতা ওনার থাকলেও তা কিঞ্চিৎ। তিনি বলেন,“ছোটবেলায় স্কুলে সবাই যেমন দুই-একটা নাটক করে থাকে তেমনটাই আমি করেছিলাম।” ‘অবাক জলপান’ নামটা মনে করে বললেনও।
ওনার মতে, আর্থিকভাবে কিছু পাওয়ার জন্য মানুষ থিয়েটার করেন না। বিমান বাবুর চেনা অনেক অ্যামেচার থিয়েটার আর্টিস্ট আছেন যাঁরা কেবলমাত্র থিয়েটারের আকর্ষনেই থিয়েটার করেন। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক বা সরকারী দফতরে চাকরিও করেন। উদাহরণ স্বরূপ ‘বিধানসভা রিক্রিয়েশন ক্লাব’র উদ্যোগে মঞ্চায়িত নাটক ‘বিবাহ বিভ্রাট’-এর কথাও বললেন। সাংস্কৃতিক জগতের বিকাশ হোক এই দৃষ্টিভঙ্গি যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আছে তা তিনি বেশ জোরালো ভাবেই জানালেন। এমনকি রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর নাট্য উৎসবের সময় বিধানসভার গেস্ট হাউসের অনেকগুলি ঘর ওনাদের দেওয়া হয়।সব শেষে ক্ষোভ প্রকাশও করলেন সিনে ক্লাব নিয়ে। ১৯৭০-৭১ সালে তাঁদের ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার আফিলিয়েশানে গার্ডেনরীচে গড়ে ওঠে এই সিনে ক্লাব। তিনি বললেন, “ঋত্বিক ঘটকের তখন খুব দুরাবস্থা। কেউ ওনার খবর রাখত না। ওনার আর্থিক সহায়তার জন্য একটি ছবির প্রদর্শনী আমরা করেছিলাম। সেই অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছিল তাঁর পরিবারের হাতে। ব্যক্তিগতভাবেও আমার সঙ্গে ওনার পরিচয় ছিল। আমার মেটিয়াবুরুজের বাড়িতে উনি একদিন ছিলেনও। ঋত্বিকদা বিড়ি খেতে খুব পছন্দ করতেন। আমি ওনার কাছে গেলেই সুদর্শন বিড়ির বান্ডিল নিয়ে যেতাম। খুব মনে পড়ে সেই দিনের কথা।” এই সিনে কালচার এখন কমে যাওয়ায় আর সেই ক্লাবের অস্তিত্বও নেই।
মাঝে একটা সময় এসেছিল যখন খুব কম মানুষ নাটক দেখতেন। কিন্তু সময় পাল্টেছে। এখন বেশ অনেক মানুষ নাটক দেখছে। ‘বুদ্ধিজীবী’ নাটকটি দেখতে গিয়ে খুব ভালো লেগেছে প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ দেখে। সমাজকে নাটক কতটা আলোড়িত করছে সেই বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও সকলে নাটক দেখছেন এটা নাট্যলোকের জন্য ভালো প্রভাব। নিজে আবার কখনো নাটক করতে পারলে খুশি হব।
অনুলিখন : সৌমিতা গাঙ্গুলী
No comments:
Post a Comment