Saturday, 22 August 2015

শততম জন্মবার্ষিকীতে লহ প্রণাম - শম্ভু মিত্র


উত্তর কলকাতার 'রংমহল', ১৯৩৯ - এক নক্ষত্রের জন্ম হয় পরাধীন দেশের রঙ্গমঞ্চে তারপর 'মিনার্ভা', 'নাট্যনিকেতন' হয়ে 'শ্রীরঙ্গম'-এর পথ পেরিয়ে ক্রমশ তার উদয়যাত্রা মধ্যগগনে এরপর ঐতিহাসিক ১৯৪৩, প্রাক -স্বাধীনতা ভারতবর্ষ তখন অগ্নিগর্ভ, রাজনৈতিক ডামাডোলে উত্তাল কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরের স্বাধীনতাই শেষকথা নয় অনাহার-অর্ধাহার-ক্লিষ্ট মানুষের ভিড়ে দীর্ণ ভারতমাতার আসন্ন গর্ভপাতে পাশব উন্মাদনার আর্তনাদ গণনাট্য আন্দোলনের ছায়াপথে ঠিকরে পড়ল সেই নক্ষত্রের বিকীর্ণ কিরণমালা ১৯৪৪, পরাঙ্মুখ হতবুদ্ধ জাতির বিমিশ্র রুদ্ধচিন্তায় 'নবান্ন' পর্বের নির্মম অভিঘাত উত্তর-স্বাধীনতার ১৯৪৮, নক্ষত্রের বুকের ফাটলে প্রাণ পেল একটি নবীন চারাগাছ - 'বহুরুপী' ১৯৫০ থেকে 'নিউ এম্পায়ার'- বহুরুপে 'বহুরুপী', 'পথিক', 'ছেঁড়া তার' কিংবা 'উলুখাগড়া' , কিংবা রাবীন্দ্রিক 'রক্তকরবী' - অস্ফুট সময়টা তখন ১৯৫৪ আবারও আবারও মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন রবীন্দ্রনাথ, নতুন রুপে বিশ্বপথিক তখন কন্ঠে গণসঙ্গীতের সুর 'তাহার নামটি রঞ্জনা', 'কাঞ্চনরঙ্গ' - নক্ষত্র তাঁর সাধের দলটিকে ভরিয়ে দিলেন তারার আলোয়, বুভুক্ষু মানুষের ক্রন্দন ধ্বনিত হলো যবনিকার পরপারে, ঘোষণা করলো ভন্ড সমাজপতিদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ পাশ্চাত্যের নাটকও বাদ গেল না তাঁর প্রযোজনার চূড়ান্ত মঞ্চসাফল্য থেকে, রচিত হলো মঙ্গলকাব্যের গৌরচন্দ্রিকায় 'চাঁদ বনিকের পালা' শুধু রঙ্গালয় নয়, রুপোলী পর্দার দর্শকও দু'চোখের নিষ্পলক দৃষ্টিতে দেখেছিল সেই নক্ষত্রের মহাজাগতিক সোনালী ঝলক অভিনেতা, নাট্যকার বা নাট্যনির্দেশক বা সর্বোপরি নাট্যবিপ্লবী এই কিংববন্তি নক্ষত্রের কোনো বিশেষণ দেওয়া শুধু বাহুল্যতাই নয়, হাস্যকরও বটে শতবর্ষের অরুন-আলোয় শেষরজনীর শুকতারাকে শ্রদ্ধা জানাই আমরা, শততম জন্মবার্ষিকীতে লহ প্রণাম - শম্ভু মিত্র

No comments:

Post a Comment