Monday, 3 August 2015

কেয়া চক্রবর্তী ও বাংলা থিয়েটার একটি তথ্যচিত্র



মাত্র চৌত্রিশ বছরে জীবন নাট্যের ইতিরেখা টেনে যবনিকার অন্তরালে হারিয়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী কেয়া চক্রবর্তী সাজঘরের সুগন্ধি বাতাসে আয়নার চিত্রপটে ঠিকরে পড়া সোনালি আলোয় আর কখনো ফুটে ওঠে নি তার মায়াবী মুখের ছবি অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছিল তার, চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আর সেই অস্বাভাবিক মৃত্যুরহস্য ঘিরে জল্পনার গুঞ্জন ছড়িয়ে পরেছিল মানুষের মনে বছরের পর বছর সময় এগিয়ে চলে, ক্রমে পেরিয়ে যায় বিস্মরণের সুদুর দিকচক্রবাল কালের অতলে তলিয়ে যান বাংলা নাট্য জগতের বীরাঙ্গনা অভিনেত্রী কেয়া
                                                                                       তার চলে যাওয়ার সাড়ে তিন দশক পেরিয়ে গেছে আজ সাম্প্রতিককালে তার মৃত্যুরহস্য নিয়ে ছায়াছবি নির্মানের প্রয়াস হয়েছে সেই প্রয়াস কি বিগতবর্ষার বৃষ্টিভেজা মাটিতে ঝরে পরা কেতকী পুষ্পের প্রতি শ্রদ্ধাতর্পণ নাকি স্মৃতির ভেলায় ভেসে যাওয়ার আবেগতাড়িত মেদুরতা নাকি রহস্যের তমিস্রায় সত্য-উন্মোচনের আলোকসম্পাত নাহি শুধুই চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শককে কন্ডুয়নসুখ উপহার দিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য, তাও নতুনতর এক বিতর্কের জাল বুনেছে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে কিন্তু এত কিছুর তলায় যে নির্মম ভাবে চাপা পরে গেছে সে বিতর্কের কেতকী নয় সে একজন মঞ্চদাপানো অভিনেত্রী, একজন কর্মমুখর নাট্যব্যক্তিত্ত্ব যার নিরলস নিভৃত সংগ্রামে লালিত হয়েছিল বাংলা নাটকের একটা অবিস্মরণীয় সময়কাল

এক সময়ে স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্রী ছিলেন কেয়া সেই কলেজেই পড়াতেন তরুণ সান্যাল সেই সুবাদেই শৈশবে কেয়াকে খুব কাছ থেকে একদম অন্যভাবে দেখার সুযোগ হয় তরুণ বাবুর ছোট্ট মেয়েটির ইতিহাসের ধুলো ঝেড়ে হারিয়ে যাওয়া কেয়াদিকে বিতর্কের বাইরে অভিনেত্রী বা নির্ভেজাল এক নাট্যকর্মী রূপে খুঁজতে চাইছেন সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটি, আজকের চিত্রপরিচালিকা শতরুপা সান্যাল কেয়া  চক্রবর্তীকে নিয়ে তথ্যচিত্র করছেন শতরুপা, শিরোনাম - আগুনের খেয়া

নাট্যজগতের যেসব প্রবাদপ্রতিম পুরাতনী কেয়াকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে তারা এই তথ্যচিত্রকে ঋদ্ধ করছেন তাদের স্মৃতিচারণায় উঠে আসছে পরতে পরতে ঘুমিয়ে থাকা অজানা ইতিহাস সাক্ষাত্কার দিচ্ছেন বিভাস চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায়, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, মায়া ঘোষ এবং আরো অনেকে বিভাসের স্মরনিকায় আজও জীবন্ত  সেই দিনগুলো - অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'রাত্রি' নাটকে একসাথে অভিনয় করার সময়টা যেন থমকে গেছে কালচক্রের অনাবর্তে মায়ার কথায় আবার ভাস্বর হয়ে ওঠে  জীবনসায়াহ্নের অবসাদদীর্ণ কেয়ার বিবর্ণ জলছবি অশোকবাবু অনেক প্রাচীন নাট্যব্যক্তিত্ব তিনি শুনিয়েছেন অকুতোভয় অভিনেত্রীর অরূপকথা বোলান ছিলেন কেয়ার ছাত্র তার চোখে কেয়াদি ছিলেন নারীবাদী বিপ্লবী মধ্যবিত্ত সমাজের ভন্ড মনোবৃত্তির সঙ্গে ছিল তার আপোষহীন সংগ্রাম

শতরুপা তার ছবিতে আরো যাদের সাক্ষাত্কার রাখতে চান তারা হলেন সন্ধ্যা দে, সৌমিত্র মিত্র, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ এবং অবশ্যই রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত,যার নান্দীকার ছিল কেয়া চক্রবর্তীর অকালপ্রয়াত জীবনের অনুরণিত হৃদস্পন্দন এই তথ্যচিত্রে শতরুপা সকলের নাম রাখছেন সম্পূর্ণ রূপে অপরিবর্তিত এবং অবিকৃত


যে কেয়া কে আজ ভুলে গেছে বাংলার তামাম নাট্যপ্রেমী সেই কেয়ার অনুসন্ধানে চলেছেন শতরুপা কোনো রহস্যময় ইন্দ্রজাল নয়, ভোরের বাতাসে রাত্রির বৃষ্টিভেজা সেই কেয়াকে খোঁজার চেষ্টায় অদম্য অভিসারযাত্রা তার প্রায় চার দশক পিছিয়ে গিয়ে আবার যদি আমরা দাঁড়াতে পারি অতীতের রঙ্গমঞ্চে দেখব হয়তো আবার সেই অভিনেত্রীকে যিনি আর কোনদিন হয়তো হারিয়ে যাবেন না, হয়তো বা বেঁচে থাকবেন নাট্যানুরাগী বাঙালি দর্শকের মননের অশ্রুসজল মণিকোঠায় শতরুপা সান্যালের এই তথ্যচিত্র 'আগুনের খেয়া '- অপেক্ষায় রইলাম আমরাও

No comments:

Post a Comment