Monday 7 September 2015

আমার চোখে নাট্যমঞ্চ : সঞ্জয় নাগ (চিত্র পরিচালক)


ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতে কখনো তিনি বিশ্বকবি আবার কখনো তিনি দিওয়ান চন্দ্রশেখর। অন্য দিকে ঋতুপর্ণ হয়ে ওঠেন তাঁর ছবির প্রধান চরিত্র। নিজেই জানালেন ক্যামেরার সামনের থেকে পিছনে থাকা তাঁর বেশী পছন্দের। কথা হচ্ছে পরিচালক এবং অভিনেতা সঞ্জয় নাগের বিষয়ে। তিনি তাঁর নাটক দেখার অভিজ্ঞতা জানালেন আমাদের।
পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রথম নাটক দেখা শুরু। অভিজিৎ সরকার অর্থাৎ বাদল সরকারের ছেলে আমাদের বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক ছিলেন। তখন যদিও বাদল সরকার কে জানতাম না বা থিয়েটারটাও বিশেষ বুঝতাম না। কিন্তু স্কুলে নাটকটা করতেই হত। ভালো হোক, খারাপ হোক, মঞ্চে উঠে হোক বা মঞ্চের পেছনে সকলকেই যুক্ত থাকতে হত। এটা নাটক চর্চার সূত্রপাত বলা চলে। সেই সময়েই “মিছিল” দেখা। বাদল সরকারের “থার্ড থিয়েটার” দেখা। আমি অনেক বিখ্যাত নাটকেরই রিভাইভড ভার্সন দেখেছি। যেমন ‘ফুটবল’,‘জগন্নাথ’, ‘মারীচ সংবাদ’, ‘মাধবী মালঞ্চি কইন্যা’ এই নাটকগুলি আমার মনে দাগ কেটে যায়।
আমি সেন্ট জেমস স্কুলে পড়তাম। স্কুলে নাটকের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার একটা সুযোগ থাকত। তবে পরে সেটা আকর্ষনে পরিনত হয়। আমি যখন স্কুল ছেড়ে দিচ্ছি তখন আরো একটা নতুন রীতি তৈরী হয়। স্কুলের ছাত্র বা শিক্ষকদের নাটক লিখতে হত এবং পারিপার্শ্বিক সব কাজই করতে হত। আমি ব্যাকস্টেজেই কাজ করতে পছন্দ করতাম। বরং ডিরেক্টরকে আসিস্ট করা বা লাইট, সাউন্ড নিয়ে কাজ করাতে ভালো লাগত।
এখন ভাবলে মনে হয় থিয়েটারের বীজ সেই সময়ে আমার মধ্যে বোনা হয়েছিল। পরিচালক হওয়ার ইচ্ছে হয়ত অজান্তেই জন্মাতে শুরু করে। বিদ্যা মন্দির, কলা মন্দির বা জি.ডি বিড়লা সভাঘরে বাইরের বহুদল অভিনয় করতে আসত। তাঁদের নাটক দেখেছি। এছাড়া প্রচুর আমেচার ইংরাজী নাটকের দল ছিল। আমার অনেক বন্ধু ছিল যারা থিয়েটার করত। ফলত নাটক দেখা একটা এক্সারসাইজ মত তৈরী হয়েছিল।
তখন ইন্টারনেটও ছিলনা বা নিয়মিত সিনেমা দেখার সুযোগও ছিলনা। সপ্তাহে একবার টিভিতে সিনেমা দেখানো হত। ফলত থিয়েটার দেখার আগ্রহ ছিল। তবে শম্ভু মিত্রের নাটক দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। উৎপল দত্তের নাটকে অভিনয়ও দেখিনি। এটা আমার আফসোস।
বছর কয়েক আগে একটি চ্যানেলর জন্য কাজের সুযোগ আসে। সেখানে বাংলাদেশের থিয়েটার নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়। সেলিম আলদিনের অন্যরকম ফর্ম নিয়ে একমাত্র ঢাকার একটি দলই কাজ করে ,সেটি হল ঢাকা থিয়েটার দল। ঢাকার নাটকের সঙ্গে আমাদের নাটক তৈরির মিল - অমিল নিয়ে কাজ করেছি।এটা আমার একটা খুব বড় এক্সপোজর নাটকের ক্ষেত্রে। আমার যেটা মনে হয়েছে মুক্তি যুদ্ধের পর অনেকে কলকাতায় এসেছিলেন। সেই ফাঁকা সময়ে অনেক নাটক ওনারা দেখতেন। সেই মিলটা এখনও রয়েছে।
জামিল আহমেদ নামক নাট্য ব্যক্তির ‘কমলা রঙের সাগর দিঘি’ নাটকটি দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে কৌশিক সেন, ব্রাত্য বসু, সুমন মুখোপাধ্যায়, মনিশ মিত্র সকলেরই অনেক নাটক দেখেছি। কিন্তু আমার মনে সেভাবে দাগ কাটেনি। সেই তুলনায় হাবিব বাবুর নাটকটি আমার আকর্ষিত করেছিল খুব বেশি। এখানকার থিয়েটার ফর্ম,লাইট,সাউন্ড,কস্টিউম কোনকিছুই আমার বিশেষ লাগেনা। আমি ব্রডওয়েতে নাটক দেখেছি। সেই স্বর্গীয় অনুভূতি এখানে পাইনা। এমনটাও আমার মনে হয়না যে শুধুমাত্র টাকার অভাবে গুণগত মানের নাটক হচ্ছে না। বরং কলকাতার বাইরে অনেক বেশি ভালো মাপের কাজ হচ্ছে।
সবাই নিজের মত করে নাটক করছে। কিন্তু মানুষ খুব নাটক দেখছে না। খুব কম নাটকেই হাউসফুল দেখি। অ্যাকাডেমীতে নাটক করতে পারছি না বা হল পাচ্ছি না সেটা না করে অনেক ফাঁকা যায়গা পরে আছে সেখানেও থিয়েটার চর্চা করা যায়। এত দল এতরকম কথা বলছে অথচ তাদের বেশিভাগের দলই সামান্য টিকিটে অভিনেতাদের নাম উল্লেক করেন না। আমার কোনো বিশেষ চরিত্র ভাল লাগলে তার নাম জানার পর্যন্ত উপায় নেই।
আমার খুব অন্ধকার একটা স্থানে আটকে পরেছি। কিন্তু এই অন্ধকার জায়গায় এত আলো যে বেড়োনোর পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খুব সাধারণ মাপের একটি প্রোডাকশনও শুধুমাত্র প্রচারের আলোয় ফুলে-ফেঁপে উঠছে। সিনেমা-থিয়েটার-নাচ-গান সবক্ষেত্রেই একই নীতি প্রযোজ্য।
অনুলিখন : সৌমিতা গাঙ্গুলী
ছবি : অশোক নাইয়া

No comments:

Post a Comment