Monday 28 September 2015

আমার চোখে নাট্যমঞ্চ : নাইজেল আক্কারা (অভিনেতা)


সৌমিতা গাঙ্গুলী
মঞ্চেই প্রথম মন খুলে কাঁদতে পেরেছিলেন নাইজেল আক্কারা। আর তার পরের জীবনটা সকলেরই জানা। এই নাটকই তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছে। তাঁর ভাবনা অনেকের অনুপ্রেরণা। সেই ভাবনা তিনি ভাগ করে নিলেন আমাদের প্রতিনিধি সৌমিতা গাঙ্গুলীর সঙ্গে।
মঞ্চে তোমার নতুন পথ চলা শুরু। সেই অর্থে মঞ্চ তোমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
নাট্যমঞ্চ আমার কাছে প্রাণ। আমার যেটুকু আত্মবিশ্বাস, যেটা নিয়ে আমি বেঁচে আছি তা হল এই অভিনয়। ৯ বছর জেলে থাকার পর সেই চেঞ্জ এবং সমাজের সামনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, সেগুলি সবই আমি প্রথমবার স্টেজে দাঁড়িয়ে পেয়েছি। আমি যেটা করেছিলাম সেই সময় সেটা ডান্স ড্রামা। প্রথম কখনো মন খুলে যদি কেঁদে থাকি তো সেটাও মঞ্চে। নাট্যমঞ্চ এমন একটা যায়গা যেটার জন্য আমি আমার জীবনে ফিরে আসতে পেরেছি। এখন যেহেতু আমি থিয়েটার করি না, মঞ্চকে আমি খুব মিস করি। তবে আমি নাটক দেখি এবং ভবিষ্যতে আমার নিজের থিয়েটার দল তৈরির ইচ্ছাও রয়েছে। আমি যে অভিনয় করি বা অভিনয় করতে ভালোবাসি সেটা সম্পূর্ণ অন্য একটা টপিক। কিন্তু ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতে গিয়েও আমার মনে হয়েছে আমি সেই মঞ্চকে মিস করি।
এখনো নাটক দেখো?
আমি চেষ্টা করি সপ্তাহে অন্তত ১-২ টো নাটক দেখার। দেবশংকর হালদারের অভিনীত যেকোন নাটক আমি দেখি। ব্রাত্যজন-এর নাটক দেখি। এছাড়াও নতুন যে দল গুলি নাটক করছে তাদের নাটক ও দেখতে যাই। নাটকে না একটা প্যাশানের ব্যাপার আছে। এতে স্টেজে কোন রিটেক নেই। সুমন মুখোপাধ্যায়ের নাটক 'ম্যাফিসটু' তে গৌতম হালদারের চরিত্র আমাকে উদ্ভুদ্ধ করে। একটা ডায়ালগ আমার মনে আছে। "আমি তো শুধুমাত্র অভিনেতা, আমি কি করতে পারি।" আজও আমি যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই এটা আমার মাথায় আসে। নাটক দেখে বাড়িতে ফিরেও কিছুদিন সেটা নিয়ে ভাবতে হয়।
‘মুক্তধারা’র আগে তুমি ‘বাল্মিকি প্রতিভা’ করেছ। নাটক, একজন অভিনেতাকে অনেক বেশি পরিণত করে তোলে এমনটাই বলা হয়। সেক্ষেত্রে তোমার কি মনে হয়না যে নাটক করলে নিজের অভিনয় স্বত্তাকে আরও বেশি ঝালিয়ে নিতে পারতে?
মনে হয় এবং করতে চাই -ও। কিন্তু থিয়েটার খুবই টাইম টেকিং। সময়টাই আমার কাছে বড় সমস্যা। আমার নিজেস্ব ব্যবসা আছে। যেখানে ১২০ জন মানুষ কাজ করছেন। তারা অনেকজন ই ফিরে আসা মানুষ। আমার ইচ্ছে আছে তাদের নিয়ে নাটক করব। ওদের দিয়ে অভিনয় করাব। এর সঙ্গে কিছু আইনজীবি ও পুলিশও থাকবেন। তবে কিছু অভিজ্ঞ নাট্য ব্যাক্তিত্বও থাকবেন যাঁরা আমাদের সাহায্যে করবেন।
মঞ্চ আমার জীবন পাল্টেছে। মঞ্চে দাড়ালে আমার এক অদ্ভূত অনুভূতি হয়। সেই মুহুর্তে আমার ভেতর থেকে আওয়াজ আসে "তুমি কি এর জন্য যোগ্য ?".তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই আমি আমার জীবনটা পাল্টে ফেলব।।
এখন যাদের নিয়ে কাজ করছ, তাদের মধ্যে কি কোন নাইজেলকে খুঁজে পেয়েছ?
তারা প্রত্যেকেই নাইজেল। শুধু আমি কেন? সংশোধনাগারের ভিতর যারা রয়েছে, বাইরে এসে কেউ হয়ত অভিনয় করবে, থিয়েটার করবে কিম্বা সংসার করবে। সেও একজন নাইজেল। তাদের ভুলের শাস্তি তারা পেয়েছে, কিন্তু সেটা কাটিয়ে এসে একটা নতুন জীবন তৈরির সুযোগ পাওয়া উচিত। একজন সেই সুযোগ পেয়ে নিজেকে শুধরে নিলে সেও নাইজেল।
এখনকার থিয়েটারের প্রধান সমস্যা হল আর্থিক সমস্যা। পাবলিসিটি-র ক্ষেত্রে বড় দল ভাল করে কিন্তু ছোট দলের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। আবার কিছু ব্যাক্তির জনপ্রিয়তার কারণেও মানুষ নাটক দেখতে যায়। কর্পোরেট সেক্টরের ইনভল্বমেন্টের প্রয়োজন আছে। আমি নিজে দল বানালে তার মার্কেটিং এর দিকেও লক্ষ্য রাখব।
তোমার সেরা নাট্য ব্যক্তিত্ব যাঁদের অভিনয় তোমাকে অনুপ্রাণিত করে?
গৌতম হালদার, দেবশঙ্কর হালদার, ব্রাত্য বসু, মোহিনী সেনগুপ্তের অভিনয় আমার খুব ভাল লাগে। এছাড়া অনেক নতুন ছেলে মেয়েরাও খুব ভাল কাজ করছে।

No comments:

Post a Comment