Tuesday 27 October 2015

আমার চোখে নাট্যমঞ্চ: দ্রোণ আচার্য (সঙ্গীত ও চিত্র পরিচালক)


দ্রোণ আচার্য (সঙ্গীত ও চিত্র পরিচালক) :
'সিরিয়াল তুমি কার ? বাংলার টেলিভিশনে এটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন, যেটা নাটকের ক্ষেত্রে হয় না ', বললেন সঙ্গীত ও চিত্র পরিচালক দ্রোণ আচার্য। নাটকের বিষয়ে, স্পষ্ট ভাষায় নিজের ভাবনার কথা ভাগ করলেন আমাদের প্রতিনিধি সৌমিতা গাঙ্গুলী -র সঙ্গে।
তোমার প্রথম নাটকের সঙ্গে পরিচয় কবে থেকে ?
২০০২ সালে দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ফ্যাতাড়ু নাটকে মিউজিক করি। তখন চন্দ্রবিন্দুর (বাংলা মিউসিকাল ব্যান্ড)অ্যাকটিভ মেম্বার ছিলাম। কি-বোর্ড বাজানোর পাশাপাশি গান প্রোগ্রামিং এবং সুর করতাম। এইভাবে আমার জীবনে নাটকের সঙ্গে প্রথম কাজ শুরু হয়।
এর আগে কী নাটক দেখতে ?
না, আগে একেবারেই নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমরা প্রত্যেকে কেরিয়ার বলে বস্তুটাকে সাজানোর জন্য যেভাবে দৌড়ায় তাতে আলাদা করে নাটক দেখার সময় পেতাম না। ১৮-২৮ বছর বয়স অবধি 'চন্দ্রবিন্দু'র সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তাই মাসে ৩০টা দিনের মধ্যে ২০টা দিনই কাটতো স্টেজে মানুষের মনোরঞ্জন করে। আর বিচিত্রানুষ্ঠানে গানের পাশাপাশি নাটক সেভাবে হয় না। আমার যেটা মনে হয় নাটক বোঝার জন্য একটা বয়স এবং সেনসিটিভিটি দরকার হয়। যেটা আমার মধ্যে তখন ছিল না। আর আমাদের কলেজ জীবনে যে ধরনের রাজনৈতিক, কমার্সিয়াল বা সস্তা ওচা মানের কমেডি নাটক হতো সেগুলি আমার একদমই দেখতে ভালো লাগত না।পরবর্তীতে কখনো সখনো কোনো এক বন্ধু অভিনেতা বা অভিনেত্রী অভিনয় করছে বলে হয়তো অ্যাকাডেমি চত্বরে পা রেখেছি। তবে তা খুবই কম- ধুমকেতুর মতো আসা ঘটনাই বলা চলে।
আবার কীভাবে নাট্য জগতে অনুপ্রবেশ ঘটলো ?
বছর দু-তিনেক আগে টিভি চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে দেবেশদার (চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে কথা হয় তার পরবর্তী পরিচালনায় সুর করার ব্যাপারে। 'গৃহপ্রবেশ' নাটকে নিজের ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর ইচ্ছাতেই কাজ করতে রাজি হই কারণ নাটক এমন একটা জায়গা যেখান থেকে বিশাল কিছু অর্থ উপার্জনের উপায় নেই। এরপর দেবেশদার 'সাঁকো','আপাতত দুজনের দেখা হয়েছিল', 'নিঃসঙ্গ সম্রাট', ব্রাত্য বসুর 'কে' প্রভৃতি নাটকে মিউজিক করেছি ।
সিনেমার মিউজিক থেকে নাটকের মিউজিকে কতটা পার্থক্য পেয়েছ ?
সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে বেশির ভাগ সিনেমার গান মানেই সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার কপি ,সেটা নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। থিয়েটারের ক্ষেত্র অবশ্যই ভিন্ন। অনেক কিছু করার থাকে , ভাবনা থাকে।
থিয়েটারের চিরকালীন আর্থিক সমস্যাগুলিকে কীভবে দূর করা সম্ভব বলে তোমার মনে হয়?
শুধু টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে কখনই থিয়েটারে লাভবান জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব না। ন্যাশ্যনাল থিয়েটারের দলগুলি বিভিন্ন শহরে যেভাবে নাটক করে কলকাতার দলগুলির সংখ্যা সেই তুলনায় অনেকটাই কম। নাটকের লোকজন একত্রিত হয়ে কোনদিনই দাঁড়াননি , সকলেই নিজেদের সেরা মনে করে এবং তারা ছাড়া নাটকটা কেউ বোঝে না। একটা 'আনর্গানাইজ্ড সেক্টর ' -এ রুপান্তরিত হয়েছে কলকাতার নাটক। ফলত বহু ছেলে-মেয়ে নাটকে অভিনয় শিখে টেলিভিশনে নাম লেখাচ্ছে। নাটকে কাজের জন্য একটা ভালোলাগা এবং ডেডিকেশন দরকার। বিদিপ্তা চক্রবর্তী , সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় , শান্তিলাল মুখার্জী মঞ্চে নাটক করেন। বহু রুপালি পর্দার অভিনেতারা নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করেন , সেখানে তাঁরা কখনোই টাকার কথা ভাবেন না। আমি নিজেও যখন নাটকের মিউজিক করি ,রিহার্সালে প্রত্যেক দিন আমি উপস্থিত থাকি এবং সেই ১৫ দিন আমি আর কোনো কাজ রাখি না। আমি সকলকে গর্বের সঙ্গে বলি নাটকের মিউজিক করছি।
তোমার প্রথম পরিচালিত ছবি 'এক এক্কে দুই' , পরিচালনার প্রথম অনুপ্রেরণা কি নাটক থেকেই ?
একদম তাই। দেবেশ দা (চট্টোপাধ্যায় )এবং ব্রাত্য দা (বসু) আমার কাছে ভগবান। অ্যাক্টিং কাকে বলে , কিভাবে কম্পোজিশান তৈরী হয়, কোনদিক থেকে লাইট আসবে এই সবটাই আমার রিহার্সাল থেকে শেখা।
তোমার সেরা নাট্য অভিনেতা ?
দেবশঙ্কর হালদার।
সেরা পরিচালক ?
দেবেশ চট্টোপাধ্যায়।

No comments:

Post a Comment